KISHORE KUMAR


কিশোর কুমার।

গানের গলা না গানের গভীরতা শ্রেষ্ঠ করেছে?

রিহার্সালের দিন কিশোর কুমারের কোনও পাত্তা নেই! মান্না দে, মহম্মদ রফি চিন্তায় পড়ে গেলেন। এ রকম করলে রেকর্ডিংয়ের কী হবে? তখন তো আর স্ট্রাক রেকর্ডিংয়ের সিস্টেম ছিল না। যা হবে প্রথম থেকে শেষ একেবারে লাইভ। খুব ভাল রিহার্সাল না থাকলে যেটা সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে এই গানটি গাইছেন হিন্দি গানের ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। মান্না দে, মহম্মদ রফি এবং কিশোর কুমার। খুবই বিরল ঘটনা। ছবির নাম ‘চলতি কা নাম জিন্দেগি’। খুব খটোমটো গান। মান্না দে এবং মহম্মদ রফি নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। রফিসাব একসময় বিরক্ত হয়ে বললেন, “কিশোর গানটা ঝুলিয়ে দেবে। গট আপ ছাড়া এ গান হয় নাকি?” মিউজিক ডিরেক্টরকে কমপ্লেন করে কোন লাভ নেই, কারণ সুরকারের নামও কিশোর কুমার। রেকর্ডিংয়ের দিন যথাসময়ে কিশোর কুমার উপস্থিত। কোনও টেনশন নেই। হাসি মজা করছেন। যত টেনশন বাকি দু’জনের। ভাল ভাবে রেকর্ডিং হয়ে গেল ‘বন্ধ মুঠি লাখ কি।’ মান্না দে ও মহম্মদ রফি মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন, কি গানটাই না গাইল কিশোর কুমার! মনে মনে একটা কথাই ভাবছেন, বিনা রিহার্সালে এমন গান গাওয়া কেবল কিশোরের পক্ষেই সম্ভব!
খানিকটা এমন ঘটনা ঘটেছিল ‘পড়োশন’ ছবির সেই বিখ্যাত গান ‘এক চতুর নার করকে শৃঙ্গার’-এর রেকর্ডিং যখন হয়। সব কিছু ঠিকঠাক। রেকর্ডিংয়ের আগের দিন কিশোর কুমার বেঁকে বসলেন, এই গান তিনি কিছুতেই গাইবেন না। মান্না দে-র সঙ্গে ডুয়েট গান। খুব চেপে ধরতে বললেন, “কী করে গাইব বলুন তো? আমি কি আপনার মতো ক্ল্যাসিকাল জানি? পঞ্চম ঢেলে সব কাজকর্ম করে দিয়েছে!” আরও জোরাজুরি করতে বললেন, “তা ছাড়া কেমন যেন শুনছিলাম, কম্পিটিশনে আমি হেরে যাব!” কিশোরদা জিভ কেটে বললেন, “আপনার কাছে হারতে আমার আপত্তি নেই মান্নাদা!” এই গানের প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, “কি গানটাই না গাইল কিশোর! এমন ইম্প্রোভাইস করল ভাবাই যায় না!”
এই হলেন কিশোর কুমার।

কিশোর কুমার

জ্যোতিষ নিয়ে বিচার করলে কিশোর কুমারের জন্ম জাতচক্রে দেখা যায় ধনু লগ্ন। ধনু হলো একাগ্রতার প্রতীক নির্দিষ্ট লক্ষে তার চিন্তা ভাবনা। লগ্নে অবস্থা ২/৩ পতি শনি। গানের জন্য ২/৩ পতির গুরিত্ব অনেক বেশী। সেই শনির অবস্থান লগ্নে। এই শনি আবার একাগ্রতায় চরম সীমায় যেতে সাহায্য করে।

মানুষ যে কোনো কাজ করুক সেই কাজের গভীরে না পৌঁছাতে পারলে তার সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারেনা। জাতচক্রে যদি ৮ভাব বা ৮ম পতি সুদৃঢ় না হয়। কিন্তু কিশোর কুমারের জাতচক্রে ৮পতি চন্দ্রের অবস্থান সেই ৮মে। তার সাথে ৯/১০ পতি চরম রাজ যোগ কারক গ্রহ রবি আর বুধের অবস্থান ওই ৮ ভাবে।

৯ ভাব মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে, আর ১০ম ভাব মানুষের কর্ম নির্ধারণ করে থাকে। যদি মানুষের ৯/১০ ভাব পতি ৮ম ভাবে অবস্থান করে তাহলে তার ভাগ্য আর কর্মের গভীর চিন্তা ভাবনা অরিস্ফুট করতে ভীষন ভাবে সাহায্য করে। কিশোর কুমারের জীবনে ঠিক একই ভাবে তার গানের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছিলো। যার কারণে গানের প্র্যাক্টিস ছাড়াই অনেক কঠিন কঠিন গান একবারেই গেয়ে সারা বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে।

সম্রাট বোস
7890023700