New year in numerology

২০১৯ কি নিয়ে আসছে আপনাদের জন্য?
ভেবে দেখেছেন?
সংখ্যাতত্ব দিয়ে একটু আলোচনা করে দেখা যাক।
২+০+১+৯=১২
১+২=৩

তিন(৩)।
(বৃহস্পতি)

পৃথিবীর সম্ভবত সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তারকারী সংখ্যা।সবকিছুতেই যেন ৩ লুকিয়ে আছে।কোন না কোনভাবে ৩র সাথে সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাসের মতে তিন হচ্ছে পারফেক্ট নাম্বার।

তিন,মানে আমি-তুমি-সে।কাল তিনটি,অতীত-বর্তমান-ভবিষৎ। মোলিক রঙের সংখ্যা ও তিন-লাল,সবুজ,হলুদ।মানুষের তিন প্রকৃতি দেহ-মন-আত্মা।
ক্রিস্টানদের হলি ট্রিনিটি-পিতা,পুত্র,পবিত্র আত্মা।
হিন্দুদের ত্রিমুত্রি-ব্রক্ষা,বিষ্নু ও শিব।তাদের প্রধান দেবী সংখ্যা তিন-দুর্গা,সরস্বতী,কালী।
শিব ঠাকুরের ত্রিশূল তিনটি কাটা যুক্ত
১, ইচ্ছা শক্তি ২, কর্ম ৩, জ্ঞান এর প্রতীক।
শিবের তিনটি চোখ। তৃতীয় চোখ সর্ব শক্তিমান, সবকিছু দেখতে পায়। রি তৃতীয় চোখকে আমরা জ্ঞান চক্ষু বলে থাকি।

বোদ্ধ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থের নাম ত্রিপিটক।
এর অর্থ তিনটি ঝুড়ি।ত্রিপিটককে তিন ধরণের শিক্ষায় ভাগ করা হয়-সুত্রা পিটক,বিনায়া পিটক,অভিধর্ম পিটক।

জুডাইজমেও তিনের আধিক্য ব্যাপক।তাদের পুর্বপুরুষ তিনজন-আব্রাহাম,আইজ্যাক,জ্যাকব।তাদের প্রার্থনার সময় তিনটি-সকাল,দুপুর,রাত।সাবাতের সময় তারা তিনবার খাবাত গ্রহণ করে।
দুনিয়াতে একেশ্বরবাদী ধর্মের সংখ্যা ও তিন-মুসলিম,ক্রিস্টান,ইহুদি।

মুসলমান ধর্মে পরিচিত ৭৮৬,বিছমিল্লাহ-র স্যাংখিক রুপ।অংক সংখ্যা তিন।
শয়তানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ৬৬৬।এখানে ও তিনটি অংক।
গ্রিক পুরাণে তো তিন রীতিমত রাজত্ব কায়েম করে বসে আছে।তাদের দেবতা তিনজন-দেবতারাজ জিউস,সমুদ্রের দেবতা পসাইডন,মর্ত্যের দেবতা হেডিস।জিউসের প্রতীক তিনফলাঅলা বজ্র,পসাইডনের প্রতীক ত্রিশুল,হেডিসের প্রতীক তিনমাথা অলা কুকুর।

বলা হয়ে থাকে সৃষ্টিকর্তা তিনটি জিনিস দিয়ে পৃথিবী বানিয়েছেন-মাটি,জল,বায়ু।সৃষ্টিকর্তা মানুষ ও বানিয়েছেন তিন ধরণের।পুরুষ,নারী ও বৃহন্নলা,সোজা বাংলায় বললে হিজড়া।
পদার্থের তিন অবস্থা-কঠিন,তরল,বায়বীয়।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ধরলে ও একই:মুল-কান্ড-শাখা,পাতা-ফুল-ফল,বিচি-মাংসল-খোসা।
আবহাওয়া ধরলে গরম-শীত-বর্ষা।
বলা হয়,জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে যে ৩টি বিষয়ে মানুষের কোন হাত নেই।পৃথিবী ১বছর মানে ৩৬৫দিন(শতক)।

মস্তিস্কের ভিত্তিতে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত:হোমো সেপিয়েন্স-হোমো ইরেক্টাস-হোমোনিডি।আবার মস্তিস্কের তিনটি অংশ:সরিসৃপীয়-স্তন্যপায়ী-মানব।আবার কাটাকাটির হিসাবে ভাগ করলেও তিনটি ভাগ,সোজা কথা যেভাবেই ভাগ করা হোক না কেন তিনটি ভাগেই ভাগ হবে।
আমাদের কানকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে।আমাদের রক্তে রক্তকণিকার সংখ্যা ও তিন:লোহিত কণিকা-শ্বেত কণিকা-অণচক্রিকা।যে কোন প্রাণীকে যে ভাবেই ভাগ করা হোক না কেন মুল অংশের সংখ্যা তিন ই হবে।যেমন,চামড়া-মাংস-কংকাল,পেশী-তন্ত্র-কংকাল।

ঐতিহাসিক কাল তিনটি:প্রাগৈতিহাসিক-সুপ্ত ঐতিহাসিক-ঐতিহাসিক।প্রস্তর যুগ তিনটি:প্রাচীন-মধ্য-নব্য।মানব সমাজের বিবর্তনের পর্যায় ও তিন:বন্যদশা-বর্বর দশা-সভ্য দশা।ইতিহাসের কাল বিভাজন ও করা হয়েছে তিনটি পর্বে:প্রাক ইতিহাস-ইতিহাস-প্রায় ইতিহাস।ধাতু যুগের শ্রেণীবিভাগ ও তিন:তাম্র-ব্রোঞ্জ-লোহা।সভ্যতাকে ও ঐতিহাসিকগণ তিনটিভাগ করেছেন:ভুসংস্থানিক-দৈশিক-কালিক।

প্রথথভাবে পরিবার তিন প্রকার:যৌথ-একক-বর্ধিত।বিবাহোত্তর বসবাসের ক্ষেত্রে তিন:পিতৃবাস-মাতৃবাস-নয়াবাস।পরিবারে স্বাভাবিক তিন অংশ:পিতা-মাতা-সন্তান।একদিনে ধরলে পিতা-পুত্র-নাতি।

এইসবের প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও পড়েছে।আমরা ধরেই নিয়েছি সবকিছু তিন হতে হবে।যেমন,আমরা দিনে খাওয়াদাওয়া করি তিনবার,সকাল-দুপুর-রাত।যেকোন জায়গায়,যেকোন ধরণের প্রতিযোগিতায় আমরা প্রথম তিনের মধ্যে আসার চেস্টা করি।কারণ পুরস্কার পায় ১ম তিনজন। আমরা সময়ের হিসাব ও করি তিনভাবে:সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টা,দিন-সপ্তাহ-মাস,বছর-যুগ-শতক।

এই পৃথিবীর ইতিহাস,সমাজ,বিজ্ঞান,মিথ,ধর্ম যেদিকেই তাকাই না সবদিকেই মহাপরাক্রমশালী তিনের রাজত্ব।বছর পার হয়ে যাবে,তবুও বলা শেষ হবেনা এর রাজত্ব সম্পর্কে।
মাহাত্ম্য,প্রভাব,গুরুত্ব সব মিলিয়ে মনে হয়না আর কোন অংক/সংখ্যা তিনের ধারেকাছে ও আছে।

ভালো থাকবেন সবাই।
মা সকলের মঙ্গল করুক।