Jim Carrey


আলোই যে শুধু মানুষকে পথ দেখায় এমন নয়, নিকশ কালো আধারও কাউকে কাউকে পথ দেখায়। শুধু আশা আর অনুপ্রেরনাই সফল হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় গভীর হতাশাও কাউকে কাউকে পিছন থেকে ঠেলা দেয়।
প্রত্যেকেরই জীবনে ছোট বড় গল্প থাকে। না পাওয়ার গল্প, কষ্ট পাওয়ার গল্প, অশ্রুভেজা রাতের গল্প।
কারো থাকে না খেয়ে থাকার নির্মম গল্প, টিউশুনির গল্প, খাঁ খাঁ রোদে ভেজা শার্টের গল্প।
আরো থাকে নির্মম অবহেলার গল্প। ছোট লোকের গল্প, বড় মানুষের গল্প।

জিম ক্যারি

জেমস ইউজিন ক্যারি, যাকে আমরা চিনি জিম ক্যারি নামে। তিনি ১৯৬২ সাল কানাডার নিউমার্কেট এলাকার এক মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন।

অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। বাবার কষ্ট দেখে নিজেকে স্কুলে যেতে অপরাধী মনে হত তার। তাই বাবার কষ্টের ভাগ নিতে ১৪ বছর বয়সে জেমস কাজ নেন স্টিল কারখানায়। প্রতি রাতে ৮ ঘণ্টা কারখানায় শ্রম দিয়ে সকালে স্কুলে গিয়ে কিছুই মাথায় ঢুকত না তার। কি আর করা ১৬ বছর বয়সে এসে ছেড়ে দিলেন পড়ালেখা।

কিছুদিন পরে আরো অভাবে পড়ল তার পরিবার। তারা ঘর ছেড়ে বস্তিতে বাস করা শুরু করলেন। আর জেমস তখন পার্কের বেঞ্চিতে রাত কাটানো শুরু করলেন।

প্রতিটা কষ্টই মানুষকে শক্ত করে তোলে। নতুন করে চাপ নিতে শেখায়। হাজারো চাপে একদিন সে ভেঙ্গে যায় না, অবেলায় চোখে জল আসে না। কচি লাউয়ের ডগায় যেদিন প্রথম কুঁড়ি আসে, কেউ ভাবে না এই ডগায় একদিন দশ কেজি লাউ ঝুলবে। ছোট বড় কষ্টগুলো নরম মানুষটাকে একদিন ইস্পাত বানিয়ে ফেলে।।

বোনের বাড়ির বাইরে তাঁবু খাটিয়ে রাতের পর রাত কাটাতেন জিন ক্যারি।

অবহেলা আর হতাশা মানুষকে শক্তি দেয়। সেই শক্তির খোজ সবাই পায় না। সবাইকে দেখিয়ে দেবার প্রচন্ড একটা ইচ্ছা ভিতরে কাজ করে। এই ইচ্ছা কাউকে কাউকে অনেক বড় করে তুলে। সেই বড় মানুষটার গল্প আমি লিখি। এক সকালে দু:খ পেয়েছিল, এক বিকেলে না খেয়েছিল, এক সন্ধায় সে হাউমাউ করে কেঁদেছিল। এগুলো বড় মানুষের গল্প, বিখ্যাত মানুষদের কষ্ট পাওয়ার গল্প।

বিখ্যাত মানুষগুলোর অনেকেরই শৈশব কেটেছে ক্ষুধার কষ্টে। সে গল্পগুলো আমরা মুখস্থ রাখি। তারাই আমার অনুপ্রেরণা।

হতাশার শক্তি একদিন আপনাকে বড় মানুষ বানাবে। অবহেলার কষ্ট একদিন আপনাকে মহান বানাবে। কষ্ট পেয়ে আপনি সবচেয়ে ভাল কবিতাটি লিখবেন, দূ:খ পেয়ে আপনি সবচেয়ে ভাল গানটি লিখবেন।
না খেয়ে থাকা ছেলেটা ক্লাসের ফার্স্ট হয়। গায়ে শার্ট না থাকা ছেলেটা একদিন বিখ্যাত হয়। দুবেলা ভালো করে খেতে না পাওয়া মানুষটি আজকে আমাদের প্রধান মন্ত্রী। খবরের কাগজ বিক্রী করা মানুষটি আমাদের দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, সারা পৃথিবী কাঁপানো বিজ্ঞানী আব্দুল কালাম সাহেব। এগুলো হতাশার শক্তি, কষ্টের শক্তি, না খেয়ে থাকার শক্তি। জ্বল জ্বল চোখে এ মানুষগুলো সুযোগ খুজে। সুযোগ ঠিকই একদিন আসে। কষ্টে পুড়ে যাওয়া মানুষগুলো সুযোগ হারায় না।

একদিন তিনি সাহস করে একটি কমেডি ক্লাবে গিয়ে হাজির হলেন। আর এটাই ছিল তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ক্যারির অভিনয় খুব পছন্দ হয়ে যায় তাদের।

এবার শুরু তার সফলতার পালা। তিনি বিভিন্ন ক্লাবে কমেডিয়ানের কাজ করতে শুরু করলেন। নিজের নাম বদলে রাখেন জিম ক্যারি। তবে পাকা অভিনেতা খেতাব পেতে সময় লাগে আরও ১০ বছর।

জীবনে প্রাপ্তির সাথে সাথে অবধারিত ভাবে কিছু অপ্রাপ্তি আসবে। সুখী হতে হলে অনেক কিছুই আপনাকে ভুলে যেতে হবে। কখনও হিসাব মেলাবেন না। মৃত্যুসজ্জায় থেকেও অনেকের হিসেব মিলে না।

তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘ব্যাটমান ফরইভার’ মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। এরপরই মুক্তি পায় ক্যারি অভিনীত আরেকটি অসাধারণ ছবি ‘দ্য ক্যাবেল গাই’। এই ছবির জন্য সম্মানী পান ২০ মিলিয়ন ডলার। এরপর থেমে থাকেননি তিনি। কাজ করেছেন কখনো বড় পর্দায় কখনো টিভিতে। এভাবেই শূন্য থেকে শিখরে উঠেছেন জিম ক্যারি।

সবচেয়ে ভাল উপায় আপনি আপনার নিচের দিকে তাকাবেন। আপনার চেয়েও অনেক দু:খী মানুষ খুজে পাবেন। যারা কষ্টকে নির্ভর করে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, আমি তাদের কথা বলিনা। আমার লেখা শুদু তাদের জন্যে যারা কষ্টের মধ্যে থেকেও সফলতাকে ছিনিয়ে নিয়েছে।

হেরে যাওয়ার মন্ত্র আমি শিখিনি।

সম্রাট বোস
7890023700